শনিবার, ১০ মার্চ, ২০১৮

দলিল

দলিল

যে কোন লিখিত বিবরণ আইনগত সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণযোগ্য তাকে দলিল বলা হয়। তবে রেজিস্ট্রেশন আইনের বিধান মোতাবেক জমি ক্রেতা এবং বিক্রেতা সম্পত্তি হস্তান্তর করার জন্য যে চুক্তিপত্র সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করেন সাধারন ভাবেতাকে দলিল বলে।

সাফকবলা : কোনো ব্যক্তি তার সম্পত্তি অন্যের কাছে বিক্রি করে যে দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করে দেন তাকে 'সাফকবলা', 'বিক্রয় কবলা' বা 'খরিদা কবলা' বলা হয়। এ কবলা নির্ধারিত দলিল স্ট্যাম্পে লেখার পর দলিলদাতা অর্থাৎ বিক্রেতা সাব রেজিস্ট্রারের অফিসে উপস্থিত হয়ে দলিল সই করে গ্রহীতা অর্থাৎ খরিদ্দারের বরাবরে রেজিস্ট্রি করে দেবেন। এ দলিল রেজিস্ট্রি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দলিলের তফসিলে লিখিত অর্থাৎ বিক্রীত ভূমির যাবতীয় স্বত্ব দলিলদাতা থেকে বিলুপ্ত হয়ে দলিল গ্রহীতা অর্থাৎ খরিদ্দারের ওপর অর্পিত হয়।

দানপত্র দলিল : যে কোনো সম্প্রদায়ের যে কোনো ব্যক্তি তার সম্পত্তি দান করতে পারেন। এ দানপত্র দলিলে শর্তবিহীনভাবে সকল প্রকার ক্ষমতা প্রদান করতে হবে। স্বত্ব সম্পর্কে দাতার কোনো প্রকার দাবি থাকলে দানপত্র শুদ্ধ হবে না।

হেবা দলিল : মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য দানপত্র দলিল। এ দলিল কোনো কিছুর বিনিময়ে নয়, কেবল সন্তুষ্ট হয়ে এ রকম দান করা হয়। কিন্তু এ হেবা শর্তবিহীন অবস্থায় দান বিক্রয়, কট রেহান ও রূপান্তর ইত্যাদি সব ক্ষমতা প্রদানে দান বা হেবা করতে হবে। স্বত্ব সম্পর্কে দাতার কোনোরকম দাবি থাকলে সে দান বা হেবা শুদ্ধ হবে না এবং তা যে কোনো সময় বাতিলযোগ্য। এ রকম দানপত্রে দাতার কোনো স্বার্থ সংরক্ষিত থাকবে না।

হেবা বিল এওয়াজ : হেবা বিল এওয়াজও মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি দানপত্র দলিল এবং এ দানও সন্তুষ্ট হয়ে করা হয়। কিন্তু এটি কোনো কিছুর বিনিময়ে হয়ে থাকে, যেমন_ পবিত্র কোরআন, জায়নামাজ, তসবিহ, মোহরানার টাকা, এমনকি যে কোনো জিনিসের বিনিময়েও হতে পারে, যেমন আংটি ইত্যাদি। এ হেবা বিল এওয়াজ দলিল সম্পূর্ণ শর্তবিহীন অবস্থায় গ্রহীতা যাবতীয় হস্তান্তর ও রূপান্তরের সকল প্রকার ক্ষমতার অধিকারী হবেন এবং দাতার যাবতীয় স্বত্ব গ্রহীতার কাছে অর্পিত হবে। দাতার স্বার্থে কোনো প্রকার স্বত্ব দাতার জন্য সংরক্ষিত থাকলে দলিল শুদ্ধ হবে না। এ হেবা বিল এওয়াজ অবশ্যই রেজিস্ট্রিকৃত হতে হবে। হেবা বিল এওয়াজ যদি টাকার বিনিময়ে হয় এবং ক্রমিক ওয়ারিশিসূত্রে আগে পরে তিন ধাপের পরের ব্যক্তিকে বা তৃতীয় ব্যক্তিকে হেবা বিল এওয়াজমূলে দান করে থাকে তাহলে শরিক কর্তৃক জানার তারিখ থেকে চার মাসের মধ্যে প্রিয়েমশান বা অগ্রক্রয় করতে পারে। 

বণ্টনমানা দলিল : শরিকরা নিজ নিজ ছাহামপ্রাপ্ত হয়ে ওই ছাহামের বাবদ যে দলিল করে থাকে, তাকে বণ্টননামা দলিল বলে। একই সম্পত্তিতে মালিক হয়েছেন এ রকম একই বংশের লোককে সাধারণত শরিক বলা হয়। শরিক দুই প্রকারের। যথা_ উত্তরাধিকারসূত্রে শরিক ও কোনো শরিক থেকে খরিদসূত্রে শরিক। ইংরেজিতে বলা হয় কো-শেয়ারার বাই ইনহেরিট্যান্স অ্যান্ড কো-শেয়ারার বাই পারচেজ। বণ্টননামা দলিল করার সময় সব শরিক দলিলে পক্ষভুক্ত থেকে ও দস্তখত করে বণ্টননামা দলিল করতে হবে। কোনো একজন শরিক বাদ থাকলে বণ্টননামা শুদ্ধ হবে না। বণ্টননামা দলিল রেজিস্ট্রি করতে হবে কিন্তু ঘরোয়াভাবে বণ্টন করে সব পক্ষ যদি বণ্টননামা দলিলে দস্তখত করে থাকেন তাহলেও বণ্টননামা কার্যকর হতে পারে। যদি শরিকরা আপসমতে বণ্টন করতে রাজি না হন তাহলে যে কোনো শরিক বণ্টনের জন্য আদালতে নালিশ করতে পারেন। 

অসিয়তনামা দলিল : কোনো ব্যক্তি তার সম্পত্তি কাউকে বা তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে অসিয়তকারী ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সবাইকে না দিয়ে যদি একজনকে বা কোনো তৃতীয় ব্যক্তিকে প্রদান করে থাকেন এবং অসিয়তকারীর মৃত্যুর পর যদি তার উত্তরাধিকারীরা দাবি উত্থাপন করেন তাহলে যাকে সম্পত্তি অসিয়ত করা হলো সেই ব্যক্তি উক্ত সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ পাবেন এবং অবশিষ্ট দুই তৃতীয়াংশের মালিক উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সবাইই হবেন।

উইল দলিল : হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক তাদের নিজস্ব সম্পত্তি তাদের আত্মীয়দের মধ্যে যাকে ইচ্ছা উইল করে দিতে পারেন। যিনি উইল করলেন তিনি জীবদ্দশায় একের অধিক উইল করতে পারেন। কিন্তু সর্বশেষ যে উইল করলেন কেবল সেটাই কার্যকর হবে।

না-দাবি দলিল : কোনো ব্যক্তি সুনির্দিষ্ট কোনো সম্পত্তিতে তার স্বত্বাধিকার নেই মর্মে অথবা স্বত্বাধিকার ত্যাগ করেছেন মর্মে দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করে দিতে পারেন। এ রকম দলিলকে না-দাবি দলিল বলা হয়।

বয়নামা দলিল : প্রজাদের ভূমি-রাজস্ব বকেয়া পড়লে উপরস্থ মালিকরা আদালতে খাজনার নালিশ করে ডিক্রি করতেন। প্রজা ওই ডিক্রিকৃত টাকা জমিদারকে প্রদান না করলে ওই খাজনার ডিক্রি জারি দিয়ে ওই ভূমি নিলাম করা হতো। ওই নিলাম উপরস্থ মালিকসহ সর্বসাধারণের খরিদ করার অধিকার ছিল। যে ব্যক্তি বেশি টাকায় নিলামের ডাক ওঠাতেন তিনি ওই নিলামের খরিদ্দার বলে গণ্য হতেন। খাজনার ডিক্রি ছাড়া আরো কয়েক প্রকারের নিলাম হয়ে থাকে। যেমন_ সরকার কর্তৃক ভূমির বকেয়া রাজস্ব উত্তোলনের জন্য কিংবা দেওয়ানি মোকদ্দমার খরচের টাকা আদায়ের জন্য ও রেহানি ঋণের কারণে। যিনি নিলাম খরিদ করতেন তাকে একটি নিদর্শনপত্র বা সার্টিফিকেট দেয়া হতো, তাকে বয়নামা বলা হয়।

দখলনামা দলিল : বণ্টনের মোকদ্দমা, স্বত্ব সাব্যস্তপূর্বক খাস দখল, উৎপাত ও অগ্রক্রয় (প্রিয়েমশান) ইত্যাদি মোকদ্দমায় ডিক্রির পর আদালত থেকে বণ্টনের মোকদ্দমায় কমিশনার ও অন্যান্য মোকদ্দমায় আদালতের পদাতিক বা নায়েব, নাজির যোগে ডিক্রির মর্মমতে দখলি পরোয়ানার ভিত্তিতে দখল গ্রহণ করতে হয় এবং দখল দেয়ার পর কমিশনার ও আদালতের পদাতিক বা নায়েব নাজির রিপোর্টসহ ওই দখলি পরোয়ানা আদালতে দাখিল করেন। তাকে দখলনামা দলিল বলা হয়।

রায় দলিল : কোনো সম্পত্তি টাকা-পয়সা কিংবা অন্যান্য যে কোনো কারণে আদালতে নালিশ হলে বাদীর আরজি, বিবাদীর জবাবদৃষ্টে সাক্ষ্য-প্রমাণ গ্রহণ করে একতরফা বা দোতরফা শুনানির পর হাকিম বিচার করে ওই বিচার লিখিতভাবে জানিয়ে দেন। তাকে রায় দলিল বলা হয়।

ডিক্রি দলিল : রায়ের মর্মমতে রায়ের আদেশাংশ সংযোজন করে বাদী ও বিবাদী পক্ষের নাম-ঠিকানাসহ সম্পত্তিসংক্রান্ত হলে সম্পত্তির তফসিল পরিচয়সহ একটি দলিল আদালত কর্তৃক জারি করা হয়। একে ডিক্রি বলে।।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

বিশ্বের সকল দেশের মোবাইল কোড নাম্বার

   অস্ট্রিয়া (+43) অস্ট্রেলিয়া (+61) অ্যাঙ্গুইলা (+1) অ্যাঙ্গোলা (+244) অ্যান্টিগুয়া (+1) অ্যান্ডোরা (+376) আইভরী কোস্ট (+225) আইল অ...